
একজন ‘শতবর্ষী’ দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। গত রমজানে করোনা ভাইরাস নামক মরণ ব্যাধিতে বিশ্বে যখন লাশের মিছিলে লাখো মানুষ তখন ব্রিটেনে মানবতার ডাকে লড়ছেন একজন ‘শতবর্ষী’ দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি করোনাভাইরাস সঙ্কটে দুর্গত মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার অসহায়ের জন্য মাত্র একহাজার পাউন্ডের টার্গেট নিয়ে হাটতে বেরিয়ে যিনি মোট চার লাখ ২০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন।
এ স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের বো এলাকার বাসিন্দা শতবর্ষী বাঙালি দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অর্ডার অফ দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
রানি এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে ব্রিটেনের সমাজ-জীবনে যারা বিশেষ ভূমিকা রাখেন প্রতিবছর তাদের সম্মান জানানোর রীতি রয়েছে।
প্রবীন এই ব্যক্তিত্ব ১৯৭১ সালের যুক্তরাজ্য থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন।
গত রমজান মাসের পুরোটা সময় দবিরুল ইসলাম চৌধুরী রোজা রেখে প্রতিদিন তার বাড়ির পেছনের ৮০ মিটার বাগানে পায়ে হেঁটে মোট ৯৭০ বার চক্কর দিয়েছেন।
তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ, ব্রিটেন এবং আরও কিছু দেশের করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তার জন্য অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা।
তাঁর সংগ্রহের ১ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ড দেয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগ এনএইচএসকে। বাকি অর্থ ৫২টি দেশের ৩০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়।
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, আমাদের সবার কাছে তিনি প্রেরণার এক উৎস।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি ব্রিটেনের বাঙালি সমাজ, বয়স্ক সমাজ এবং অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে এই ওবিই পদক গ্রহণ করছি।
তিনি জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে রানির দফতর থেকে ওবিই পদকপ্রাপ্তির চিঠি পেয়ে তিনি বেশ অবাকই হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন টম মুর তার বাড়ির বাগানে পায়ে হেঁটে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যেভাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড চাঁদা তুলেছিলেন; তা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন দবিরুল ইসলাম চৌধুরী।
সাবেক এই ফুটবলারের জন্ম ১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কুলঞ্জ গ্রামে, ব্রিটেনে আসেন ১৯৫৭ সালে। লেখাপড়ার পর সেখানে চাকরির পাশাপাশি কমিউনিটির কাজেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার স্ত্রী খালেদা দবীর চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার একজন নেত্রী ছিলেন।
বাঙালি কমিউনিটিতে সুপরিচিত দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অনেকেই চেনেন কবি দবিরুল হিসাবে। কবিতাপ্রেমী দবিরুল এখনও কোনো সভা-সমাবেশে গেলে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান। শত শত কবিতা লিখেছেন তিনি। তার লেখা কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।
দবিরুলের ছেলে আতিক চৌধুরী জানান, দবিরুল ইসলাম চৌধুরী তার জন্মস্থান সিলেটের দিরাইয়ে বাংলা ফিমেল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি চ্যারিটির সাথে যুক্ত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দরিদ্র, অসহায় ও অনাথ মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ভরণপোষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে মোট ৩২০ জন মেয়ে রয়েছে। এদের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে বলে তিনি জানান।
সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি | রবি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ |
১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ |
২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |